Tuesday, July 19, 2016

সান্ধ্যভাষীর শূন্য পুরাণ


সক্কাল সক্কাল জিভটা বেড়িয়ে পড়েছে মুখ থেকে
জিভ কিছুতেই আমার কথা শুনছে না
সে থাকে তার মর্জিমাফিক
হরদম আমাকেই চলতে হয় জিভের ইচ্ছায়
দুপুরের ঘুম থেকে উঠে রঞ্জাবতী ভাবলেন তিনি হাঁটতে যাবেন
অমনি জিভ, মুখ বেয়ে নেমে সোজা গেট খুলে রাস্তায়
  
জানোতো আমার জিভটা না আর আমার নেই
জিভ নিজেই একটা মানুষ হয়ে গিয়েছে, নিজেই নিজের নাম রেখেছে সান্ধ্যভাষী
আর মানুষ হওয়া মাত্রই ছাইমেখে হাফিস
মুখে কোনো জিভ নেই- আলাজিভ,
ও আলাজিভ, ওইই আলজিভ, আমার মুখে আর কোনো জিভ নেই যে-
  
ওষুধ খেলে জিভ ফিরে আসে
আমার জিভ ওষুধের কথা শোনে
অথচ আমার কথা শোনে না
আমাকে পাত্তাই দেয় না আমার জিভ
রাগ করে বেহুশ কিছু কথা ছুঁড়ে দিলেই
জিভ সেই মাত্র উলটে গলা দিয়ে নামবে
জিভটা না গড়িয়ে গড়িয়ে নামে
আর শিরদাঁড়া চেটে খায়

জিভের ইচ্ছা হল একদিন কুয়ায় নেমে স্নান সারবে
বর্ষার কুয়া, মাথা ঝুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কুয়ার রেলিঙে
সক্কলে চোখে চোখে রাখছে বাড়ীতে, ঝাঁপ না দিই
আর আমার জিভ সাপের মতো মুখের থেকে লম্বা হয়ে নামছে
যেন, কুয়ায় বালতি পড়েছে, আর আমি জিভের কাঁটা নামিয়ে
ডোবা বালতি জল ঘেটে তুলে আনবো শ্যওলার গা ঘষটে

সেই ছোট থেকেই জিভ নিয়ে করছি বারা-বাড়ি
সকালে ব্রাশ করতে নেমেই শুরু
আল জিভ, ঝোলা জিভ, জিভে জিভ, ফোলা জিভ
জিভ থ্যাতলে গুড়িয়ে দেবো, কিন্তু জিভ    তবু জিভ
খপ করে ধরে জিভ টানছি, আয়না ভর্তি জিভ
আমার জিভ তোমার লিঙ্গ হয়ে যাচ্ছে
জিভ ছোলার সময়
হড়হড় করে বমি হয়ে গেল কাফ
দগদগে লাল আলজিভের মাথায় আলপিন

জিভে স্বাদ আনতে করলা ভাজলাম
আধ পোড়া কড়াইতে রাখি চেরা লঙ্কা
শসা করলার ঝোল রাঁধুনি ফোড়ন দিয়ে
ধোয়া শসায় জড়িয়ে যায় চুল
শসার এই মৃদু সবুজে বমি আসে
হাফ চেরা শসা দেখলেই জিভ ভারী
চরক ঠাকুর জিভের নিশানে বাণ মেরেছে
জিভ আছে বলে কালী আছে
জিভ আছে বলেই না টাং ক্লিনার
কেমন জিভের মতো ল্যাজ বাঁকিয়ে গাজন ওড়ে
চরকের মেলা শেষে
প্রেমিক এসে কি করে জিভ দেখায় প্রেমিকাকে? 
জ্বরের ঘোরে তিতকুটে হয়ে ওঠা জিভ ডাকছে
আয় জিভ, আয় জিভ, আয়য়য় জিভ,
আয় রে জিভ চেরা
  
লিখতেও ভয় লাগছে-
পুরো শরীরটাই না আজ থকথকে জিভ হয়ে আছে
দুই দুইটা ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছে রোজ
দিল কোমরে কিন্তু আমি জানি
ওইখানে থাকে জিভের টক টক স্বাদ কোরকেরা
আমার কোমরে টক লাগে
মরে গেলে না হয় নাভি পোড়ে না
কিন্তু যেন জিভটাও না পোড়ে, তুই প্লিজ
সেইদিকটা একটু খেয়াল রাখিস, ছাই ঘেঁটে তুলে 


Monday, July 4, 2016

আত্মহত্যার কেস স্টাডিঃ এক


শেষ দিনে এসে চিতার পাশে দাঁড়াবে?
দাহ করে ফিরে সন্তানকে চিনিয়ে দিও... ওওই দেখ অরিয়ন
মাকে বলে চলেছি কবর ছাড়া অন্য কিছু নয় কিন্তু
  কেমন বোকার মতো তাকিয়ে থাকে
কি জানি! হয়তো ভাবে
শামুখ এতো ভয় পায় মেয়েটা,
পিঁপড়া মারে অকারণে
একদিন তো বলেই দিল, ওসব হবে না রে
মাটির নীচে তোর ঠান্ডা লেগে যাবে

তুমি বরং সেখানে নেমে মাফলার দিয়ে এসো তোমার রুমাল রেখে আসবে পাশে কিছু হারালে গিঁট দেবো, অন্ধকারে ঠিক টেপজামা হারিয়ে ফেলবো তুমি জানো,
একটা পায়ের মোজাও খুঁজে পাচ্ছিনা
শরীর খারাপ করলে ডাক্তার সেখানে যেতে পারবে না, এই যা মঙ্গল
আচ্ছা মাটির নীচে কি বালি থাকে? নাকি কেবলই তাল তাল মাটি!
কিছু বালি একটা কাগজে মুড়ে নিয়ে যেও
রেখে এসো মাথার দিকটায়
ছোটবেলার সেই খেলাটা খেলবো
মা চিল্লিয়ে গলা চিরে ফেলছে
                                                                          গরম জল ঠান্ডা হয়ে বরফ হয়ে যাবে এবার
উঠলি তুই অই খান থেকেআর আমি থেবরে বসে, বাগানের বালি, একটু দানা দানা; বাগানের সেই বালি এনে উঠনে পা ছড়িয়ে বসে মাথায় ঢালছি স্নান সেরে উঠে সারা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা মাথায় আঙুল খুঁচিয়ে সে বালি টেনে টেনে আনবো আর মাটির তল থেকে চুলগুলো সব উঠে আসবে উপরের দিকে, ধরো একটা গাছ মাটির তলায় পুতলাম আর সে গাছ শিকড় ছড়িয়ে পৌঁছে গেল আকাশের কাছাকাছি কিছু পাখী তখন সন্ধ্যায় বাড়ী যাওয়ার পথে আমার চুলের শিকড়ে বসে ডাকবেঠাকুর গোপাল
                                      ঠো ঠো ঠো

এই পাখীটা ডাকলে বাবার গন্ধ ছড়িয়ে যায়
অস্থির অসাড় ধড়ফড় করে ঘুমের ভিতর উঠে বসে বিছানায়
সারাদিনের বিভ্রান্তির ঘোর কাটিয়ে বাজারে যায়
একটাই সেবা দিয়েছে পাখীটা নিয়ম মেনে জীন্দেগীভর
বাজার থেকে কাঁকড়া আসতো
বর্ষার জল ডোবায় উপচে উঠলে
ট্যামন কোঁচা নিয়ে কাঁকড়া মারতে বের হয়
ট্যামনের একটা লিকলিকে মন ছিল
আর ছিল ট্যারা দুই চোখ
দুই চোখ ট্যারা হলে বুঝি কারো নাম ট্যামন
দিতে হয়? বাতাসা লুকিয়ে রাখতাম
সারা বিকেল বর্ষার জলে বাতাসা মুঠি করে ড্রেনের পাড়ে টাকী খুঁজতাম আঠা থিকথিকা হাতের তালু থেকে বাতাসা তুলে মুখে পুড়েই সুতো ধরিয়ে দিতো ট্যামনবলতো বড় হয়ে তোকে একদিন একটা জাল আমি ঠিক কিনে দিবো হেব্বি হবে মাইরি! তুই আর আমি জাল ছড়াবো মতির ডোবায় সুতায় টান পড়তলাল এক কাঁকড়া সন্ধ্যার ভরা ড্রেনের ধার ঘেসে মতির মতো চকচকে জলের আলো গায়ে মেখে হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরত এরপর কিছুদিন ড্রেন- ডোবা- রাস্তা একাকার হয়ে বৃষ্টি হল খুব অনেক বৃষ্টির সময় মাটির তলে কি হ্য়? হড়হড় করে জল নামে? কবরের সবাই বুঝি স্নান করে সেই জলে অত অন্ধকারে স্নানের পরে গামছা কোথায় পাব বলতো! চিরুনীটাই বা কোন বইয়ের ভাঁজে রেখেছো মনে কি আর আছে? বৃষ্টি কমতেই ট্যামন এসে বললো-
             - চল্ আজকে ভালো কই উঠবে
              - আমাকে খইলসা দিবি দুইটা
                                      - বললাম তো কই উঠবে!
                   - না আমার খইলসাই চাই রঙিন এই দ্যাখ হরলিক্সের বোতল জোগাড় করেছি
                                      - এইটা না দুইদিন আগেই আনলো বাড়ীতে, শেষ! হেব্বি খাস মাইরি তুই
                                      -  হ্যা সব খায়ে ফেললাম, খিদা পায় খুব দুপুরে বইসে বইসে খায়ে ফেললাম তো,কিছুতেই                  পেট ভরলো না  তাও        

কবরের ভিতর দিয়ে কি দারুণ সব পিঁপড়ারা যায়, হাত বাড়িয়ে টপাটপ সেগুলোকে টিপে টিপে মারতে মারতে হাতের আঙুলগুলো গেল খুলে কব্জির হাড় দুটো দিয়ে বাড়ি মারতেই মাটির দলা, তেতুলবিছা, শামুখের খোলা সব নাকে-চোখে-মুখে কানের এফোড় ওফোড় ঢুকে হুড়মুড়িয়ে কেঁচোর দলা মাথায় উঠে আসতে চাইছে ট্যামন ড্রেনের বাঁকটায় হাত ডুবিয়ে চ্যাঙ মাছগুলোকে ধরার জন্য হাঁটু মুড়ে নিঃশব্দে হাত নামিয়ে দিলো জলে, ওপর থেকে দেখলে বোঝা যায় না ট্যামনের হাতের তাবিজ অব্দি জল গভীর সেখানে যতবার হাত ডোবায় চ্যাঙটা ঢুকে যায় কাদায় আবার হাত তোলে আবার খানেক দূরে, আরো শান্ত আরো নিপুন আরো নিস্তব্ধে ডুবিয়ে দিচ্ছে হাত ট্যামন বলে, একটু যদি জাল থাকতো রে হাতে, তোকে আজ খইলসা ধরে দিতামঅই দ্যাখ খইলসা দুটা খেলছে, রঙিন কালভার্টের গোড়ায় এসে জলটা শব্দ করে গর্ত মতো জায়গায় যেখানে পড়েছে সেখানে খেলা করছে দুটা রঙিন খইলসা কিন্তু অতো গভীর থেকে হাত দিয়ে তো আর তুলে আনা যাবে না; দুম করে খুলে ফেললাম একটানে গায়ের টেপজামা
পাখী আঁকা, আমের রসের ছোপ লাগা, ছেঁড়া হুক
সাদা যে টেপজামাটা পড়ে আছি, একটানে খুলে ঝুঁকে টানটান দুটো পাশ ধরে রেখেছি হাঁটুমুড়ে
অন্য দুই প্রান্ত কোণা করে হাঁটু জলে নেমে
জলের তলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে টেপজামাটাকে ট্যামন
গাছের প্রশাখা জড়িয়ে পাতাগুলো শিরদাঁড়ার আনাচে কানাচে উঁকি দিচ্ছে
এতো ধ্যানস্থ বুঝি মানুষ কেবল কবরের নীচেই থাকতে পারে
কবরে শুয়েই হয়তো বা সঠিক অর্থে আকাশ পাতাল ভাবা যায়

একটা শিরদাঁড়া যদি সর্ব্বোক্ষণ মাটি পা তবে সেখানে ঘাস গজায় কি?

খুব সন্তর্পনে সাদা টেপজামার ওপরে, ঝকঝকে জলের ওপরে দুটো রঙিন খইলসা ঘুর ঘুর করছে ততোধিক নিপুন তালমেলে আমরা ছোট করে আনছি টেপজামার গলুই সুরুত রে একতাল শ্যাওলা জড়িয়ে এলো যে ভাবে কবরের ভিতর ছোট হয়ে আসে বেঁচে থাকা চারকোণা এক করে জল থেকে টেনে তুলে মাছদুটোকে পট করে শ্যাওলা সমেত ঢেলে দেয় ট্যামন হরলিক্সের বোতলে ভেজা টেপজামা ফেরত নেওয়ার সময় শেষবারের জন্য দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে জিতে যাওয়ায় হাসি হেসেছিলাম শেষবারের মতো ক্যামন ঝুপঝুপা ভেজা চোখ নিয়ে ফেরার সময় খইলসার বোতল কোলে নিয়ে হাইড্রেনের পাশে বসে পা চুবিয়ে বাতাসা খেলাম সন্ধ্যার আগে এত জলের তোড়ে পায়ের পাতা চারটা হড়কে যায়, ঠক ঠক শব্দ করে কালভার্টে ট্যামনের চোখে জলের ছায়া পড়ে, বিড়বিড় করে বলেতোকে একদিন একটা জাল আমি কিনে দিব মাইরি, একদিন ঠিক একটা জাল হবে আমাদের, দেখিস তুই, একটা জাল তোকে আমি দিবোই দিব
ঘরে ফিরে ধুম জ্বর বিছানায় শুয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনে দিন যাচ্ছিল বেশএকটু পরপর উঠে মুড়ি ফেলছি বোতলে ঠিক যে দিন জল পাল্টে নতুন জলে লবন ঢেলে মুড়ি দিয়েছি সদ্যসে সময় বাইরে হইচই জ্বরের ধকল তখনো চোখে মুখে, বাইরে বেড়িয়ে দেখি সবাই ছুটছে বড় রাস্তায় ক্যামন হাবাগোবার মতো ভীড়ের মধ্য দিয়ে গলে গলে একেবারে হাইড্রেনের সামনে- ট্যামন ভাসছে
ফ্যাটফেটে সাদা চোখটা সাদা হাত-পাগুলা সাদা, আঙুল গুলান সাদা 
হাইড্রেনের কালভার্টে পাতা জালে পা প্যাচায়ে বাড়ী খাচ্ছে ঠুক ঠুকডুবে যাচ্ছেআবার ভেসে উঠছেআবার ডুবে যাচ্ছেআবার ভেসে উঠে বাড়ী মারছে কালভার্টে
ট্যামনের হাতের তাবিজে জলের ধাক্কা

শরীর ফুফুফুফুফুফুফুফুফুফুফুফুফুলেলেলেলেলেলেলেলেলেলেলেলে বেলুন
এর বাইশ বছর পর সত্যি সত্যি একদিন জাল কিনে দিয়েছে ট্যামন একখানা আস্ত জাল সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আসলে বাইশ বছর আগেই বাড়ী ফিরে শুয়ে পড়েছিলাম কবরে এতদিন পড়ে কবর থেকে বেড়িয়ে জাল কিনে দিয়েছে ট্যামন আমাকে আর আমি ওই খইলসার বোতলের মুখে ঢাকনা এঁটে বাইশ বছর পরে হাইড্রেনের কিনারে দাঁড়িয়ে ভাসিয়ে দিয়ে এলাম বোতলটাকে কালভার্টের কিনারে আটকে ঠুক ঠুক শব্দ করে ডুবে গেল হরলিক্সের বোতল দুইটা খইলসা মাছকে নিয়ে
কবরে ফেরার দিন এই তো সবে শুরু
তুমি জালে মুড়ে
                       ফেলে এসো কবরকে আমার
  আমার কবরের কিনারে


কবরের পাশ থেকে ফিরে আকাশের তারা দিয়ে ভাত মেখে মুখে তুলে দিও তোমার সন্তানকে