Friday, May 8, 2020

করোনার দিনগুলোতে লকডাউনের সময় পড়া কবিতা...


দেখতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন...


https://www.youtube.com/watch?v=LwD8WWvU8Ls


একটা এখন ডুয়ার্স- এর উদ্দোগ।


Monday, May 4, 2020

কভিড নাইন্টিন এ সময়ের প্রতিভাষ

অপরজনে প্রকাশিত লেখা ... কভিড নাইন্টিন এ সময়ের প্রতিভাষ


পড়তে ক্লিক করুন নীচের লিঙ্কে -



https://aparjan.com/2020/04/25/april2020-srgapr/



                                       
                                         কভিড নাইন্টিন এ সময়ের প্রতিভাষ

এখনও গায়ে আঁচ এসে লাগে নি, তাই হয়তো লিখছি। রোজ ঘরে বসে টুকরো টুকরো খবর পাওয়ার মধ্য দিয়ে দিন গুজরাণ। নয়তো আর কোনো দুর্ভাবনার অবকাশ মাথায় নেই কখনোই। দিব্যি খাচ্ছি, ঘুমিয়ে উঠছি, ঘরে বসে নিবিষ্ট মনে লিখছি, আঁকছি। এ যেন এক পরম পাওয়া। ঐ দিকে মৃত্যু মিছিল। বিদেশে যে আত্মীয় ও চেনা বন্ধুরা আছে তাদের খোঁজ নিচ্ছি মাত্র। ব্যস এটুকুই তো। এতেই নাকি হয়ে যাচ্ছে! মাঝে মাঝে মনটা উচাটন হয় ছাত্রীগুলোর জন্য নইলে কলেজের সঙ্গেও শৌখিন দূরত্ব বজায় রেখে দিনযাপন যেন এক অনন্য স্বাদএইভাবে বাড়িটাকে কখনো দেখা হয় নি এতোদিন। মানুষ মরছে বলেই না, আমি নিশ্চিন্তে এমন দেখে নিতে পারছি আমার পরম আদরের কাঞ্চন গাছটিতে বর্ষার আগেই কিভাবে আজস্র সাদা ফুল ফুটে থাকে নিভৃতে। ঐ দিকে ইতালীতে মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়েছে একুশ হাজার। তাতে কি! সে তো আর আমার দেশ নয়। আমি রোমান্টিক হতে জানি। এই তো বাড়ি বসে দিব্যি দেখে নিলাম কালবৈশাখীর আগে বাড়ির মেহগিনি গাছটা কিভাবে পাতা ঝড়িয়ে নিলো মাত্র দু’দিনের অবসরে, ফলগুলো থেকে টুপটাপ ঝড়ে পড়লো বীজ। সারা উঠোন ছড়িয়ে গেল খয়েরী শুষ্ক পাতায়, আহা! কি বাহার। গণ কবর কি তা তো আমি আন্দাজ করতে চাইছি না। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, কে বানালো আমাকে সমকালীনতা থেকে এতটা উদাসীন। আমার কিন্তু ঘাড়ে বিপত্তি না আসা পর্যন্ত এই আকূল করা রোমান্টিসিজমের কোনো সুরাহা হবে বলে মনে হয় না। এই দিকে আমারই আত্মীয়-অনাত্মীয়রা গৃহবন্দী, খাবারের সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি খবর পাচ্ছি যখন আমি কিন্তু দিব্যি দুপুরে গড়িয়ে, বিলাসিতা করতে পারছি ফলওয়ালার ঝাঁপিতে কি কি ফল আছে সে সব নিয়ে। তাদের রুজিরোজগারের টানাটানির গল্প শুনছি জোরকদমে, এই বুঝি নতুন গল্প ফেঁদে ফেলার রসদ এবার জোগাড় হয়ে এলো। এতটা ইতিহাস, সমাজ বিচ্যুত আমাকে বানালো কে? শুধু যে ইতিহাস বিমুখ আমি সেটাই নয় যথেচ্ছ হারে বেপরোয়াও বটে। কেবল গৃহবন্দী থাকতে বিরল এক সুখানুভূতি উস্কে উঠেছে বলে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছি এই নিভৃত যাপন। কিন্তু এতো কোনো সমাজ সচেতন নাগরিকের থেকে কাম্য নয়। কাল হলো সেই আদিখ্যেতা মাখানো রোমান্টিসিজম। ঘরে শুয়ে শুয়ে ভিক্টোরিয়ান এজের ছবি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে যে সুখ তা আর এই বাজার অর্থনীতির ধসে পড়ার মধ্যে কোথায়! মন দৃঢ়ভাবে মেনে নিয়েছে এইসব বিষয় আমার জন্য নয়। ভয়টাও তাই হচ্ছে না এবার। ভয় নেই। আমি আছি দিব্যি ঘরের ভিতরে। রোমান্টিসিজম জাপটে।

মেঘের ঠিকানায় প্রবেশ করছি ক্ষণ
সহসা কি যেন আড়াল ডাকছে
দূরের রোদ রেখার মতো সমানুপাতিক
ডাকছে, বলছে কাছে আসার কথা
ধানক্ষে্তের রেজিমেন্টে প্রতিনিয়ত দেদার
কাকতাড়ুয়ার হাত হতে উড়ে যায় গাঙচিল
ক্ষেতের মধ্যেখানে মেঘের ছায়া
স্বপ্নময় আলোকিত হুটোপাটির মাতলা
নীচুতে ডাকছে কবিতার মতো চন্ডিমন্ডপ

কভিড নাইন্টিন নিয়ে পড়াশুনাও করছি ইদানিং। গার্ডিয়ান কি বলছে, নেচার কি লিখলো। অর্থনীতিবিদদের মতামত কি অথবা পরিসংখ্যান; সে এক বিশ্লেষনী প্রবন্ধ এই ছুটিতে লিখে ফেলাই যায়। বিদগ্ধ বলে পরিচিতির এ সুযোগ অন্যথা হয় কেন! কিন্তু না, বাধ সাধলো সেই রোমান্টিসিজমই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এতো বড় রোমান্টিক পরিণতি স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা যায় কি! এক সময় ম্যালেরিয়া হতো, লাভ ইন দ্যা টাইম অব কলেরাও না হয় হলো কিন্তু স্বচক্ষে করোনাকে উপলদ্ধি করার মতো এতো বড় ইতিহাস হাতের মুঠোতে পাওয়ার পর আমি স্বততই রোমান্টিক। একবার ভাবি ধিক্কার জানাবো নিজেকে। কিন্তু বলুন তো বাঙালী, দুপুরের কচি পাঠার পর আপনার শরীর কি ছেড়ে যাচ্ছে না রবিবাসরীয় হাতে ভাতঘুমে! এ যে পরম প্রাপ্তি। রুজি রোজগার নেই তো তাতে কি! রোজগারের পথ আমারও সুগম নয় এখনো, চাকরী হারানোর ভয় আমারও রয়েছে ষোলোআনাই; কিন্তু আমি তো রোমান্টিক।
আমি বরং হাকুসাইয়ের ছবি টানিয়ে রাখি চোখের সামনে। উড এনগ্রেভিংয়ের উত্তাল সামুদ্রিক ঢেউ দেখি আর ভাবি এই উর্মি তলে আমি তো নেই ভেসে যাবো না অতএব। যে নৌকারা ভাসছে এ তাদের নিয়তি। ঢেউয়ের রেখায় এমন উদগ্র অবতারণা আমাকে টানটান বসিয়ে রাখে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি শওপিঙের ‘লোটাস ফ্লাওয়ার’ক্যালিগ্রাফারের হাতে এমন কালার সেন্স চট করে খুব একটা দেখা যায় না। আমি ছবি আঁকড়ে রোমান্টিক দিনযাপন করি। বেশী করে দেখতে থাকি চিন, জাপানের ছবিগুলোকেএক এক করে ছবির হাত ধরে পাড়ি দিই এই সময় হতে বিগতকালে। হাকুসাইয়ের অন্যান্য এনগ্রেভিংয়ের কাজ দেখি। শওপিঙের ল্যান্ডস্কেপের কাজ দেখি কিন্তু মন টানে না; ফিরে আসি আর ফুলের আঁকাগুলোর দিকে। এ এক অসাধারণ মুক্তির পথ কাঠ খোদাই আর পেপারে কালির আঁকিবুঁকির মধ্যে।
চোখ সরিয়ে তাকাই ইতালীর ছবির দিকে। হাজার হোক এতো মানুষ মরছে, তা কেমন ছবি ছিলো তাই ভাবতে লাগলাম। কি বিস্ময়, যে দেশের ঐশ্বর্য এতো, দাম্ভিকতা এতো এমন কি প্রযুক্তিও এতো তার কেন এতো মৃত্যু মিছিল। গলদটা কোথায়? ছবি দেখায় কোথায় যেন ছন্দ হারিয়ে যায়। কি এমন অসুখ যার সামনে প্রথম বিশ্ব এভাবে মুখ থুবরে পড়লো!
ইন্টারনেটে খুঁজে দেখছিলাম কভিড-নাইন্টিনের নানান টুকরো খবর। স্বভাব তো, যাবে কোথায়, কোন চোরা পথে ঢুকে পড়েছি ছবির জগতে। তো সেখানেও দেখলাম অবধারিত টানাটানি পড়ে গিয়েছে মোনালিসাকে নিয়ে। তাকেও পড়ানো হয়েছে এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক। পপ আর্টের এই এক দাপুটে ঝড় যা বারবার ভারাক্রান্ত করে এসেছে মোনালিসাকে। ব্যাঙ্কসি এলো, উঠিয়ে দিলো মোনালিসার পিছনের কাপড়; তেমনি আবার কভিড এলো তো মুখে চড়লো মাস্ক। পিকাসোও কভিডের দৌলতে পেল এক নতুন অভিব্যক্তি। পিকাসোর ছবিকেও পড়ানো হলো কভিডের রক্ষাকবচ মাস্ক। স্ট্রীট আর্টের ক্ষেত্রে কভিডের বাড়বাড়ন্ত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেখলাম সনাতন দিন্দার এক গুচ্ছ ছবি। করোনার দিনগুলোতে তীর্যক দৃষ্টি সমেত মুখাবয়বে মাস্কের অবতারণা হাড় হিম করা সময়কে প্রতিভাত করছে যেন। আমার এক বন্ধু করোনার দাপট সামলাতে না পেরে অ্যান্টিস্ট্রেসের ওষুধ খাচ্ছে, তাকে বসিয়ে দেখাতে ইচ্ছা করলো ছবিগুলো, বললাম ছবি দেখ, দেখবি হালকা লাগবেআসলে এ কথা নিজেকেই বলা। দিন্দার ছবিতে রঙের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বদল দেখলাম অনেক। সাদা-কালো-ধূসরের পরিবৃত্ত থেকে বেড়িয়ে এসে ভারমিলিয়নের ব্যবহার একটি ছবিতে চোখ আটকে দিলো। ভারমিলিয়নের তীর্যক চাউনির সঙ্গে সঙ্গত রেখে অবয়বের স্টাকচার ছবিতেই মুক্তি ডেকে আনে অবসম্ভাবীএকটি ছবিতে আইভরি ব্ল্যাক ও প্রুসিয়ান ব্লুয়ের সঙ্গত যোগ্য রহস্যময়তা নিয়ে এসেছে। প্রতিটি ছবিতেই মিস্টিক আবহ করোনার ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে। দিন্দার কাজ তাৎক্ষণিক। রেখায় রঙে আকশ্মিকতার চলন মুখ্যতযেন সময়ের গড়নটাকে তুলে ধরতে চাওয়ার চেষ্টা। এক ভয়াবহ সময়ের উজ্জ্বল দলিল এই ছবি কয়টি।





শিল্পী- সনাতন দিন্দা                                    সৌজন্যে- ফেসবুক

কোভিড নাইন্টিনে বিশ্ব বিধ্বস্ত। শিল্পীরা আঁকছেন সেই আক্রান্ত পৃ্থিবীকে; এদিকে আমি ঘরে বসে দেখে যাচ্ছি রোমান্টিক পিরিয়ডের ছবি। রোমান্টিসিজমের ছবির সেই বিপুল পাহাড়ের সামনে অথবা ঝর্ণা বা সমুদ্রের সামনে একলা মানুষের বিস্তৃতি সম্ভ্রম জাগায়। চিনতে শেখায় প্রাকৃ্তিক শক্তির বিপুলতা, বিশালতাকে। আমাকে টানছে রোমান্টিক পিরিয়ডের স্টাডির কাজগুলো। নোট নিচ্ছি, লিখছিরোমান্টিক পিরিয়ডকে আত্মীভূত করার এক অবশ্যম্ভাবী রোমান্টিক পিস অব টাইম হয়ে দাঁড়ালো কি না শেষ পর্যন্ত লকডাউনের সময়। নিজেও আঁকছি। তবে বড় ছবি নয়। ছোট ছোট স্কেচে রোজকার রোজনামচা। সেখানেও কভিডের ভাবনা থাবা বসিয়েছে কখন নিজের অজান্তেই। জুড়ে যাচ্ছে মাস্ক অর্থাৎ কি না প্রতিরোধ গড়ে তোলার একমাত্র হাতিয়ার যা সর্বসাধারণের মধ্যে রয়েছে। ভাবছি বস্তির ছেলেটা স্যানিটাইজার পাচ্ছে কোথায়? তার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে জীবন কি ভাবে চালিত হবে! কত কত ভাবনা আসছে মনে অথচ নিখুঁত অলসতায় সে সব চিন্তাগুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করেই দিন গুজরাণ। রাষ্ট্র, রাজনীতির প্রতি উদাসীন আমি আবার ঘরে এসে দেখতে থাকি সুদূর পরাহত এক জগতকে। দেখি রোমান্টিক এরাকে।




প্রতিভাষ, স্কেচ - ১


প্রতিভাষ, স্কেচ - ২

কথা হচ্ছিল অপর এক শিল্পী বন্ধুর সঙ্গে ছবির বাজার নিয়ে, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব ছবির বাজার ঠিক কোন দিকে যাবে সে সংক্রান্ত দুঃশ্চিন্তা। এমনিতেই বেশ কিছু বছর ধরে ভারতে ছবির বাজার নেই, দিল্লী ব্যতীত সারা ভারতে ছবির বাজারে মন্দা। মন্দের ভালো বলতে ঐ এক দিল্লী। কলকাতার অবস্থা উল্লেখযোগ্য নয়। কভিড যেখানে বিশ্বজুড়ে মন্দাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সেখানে ছবির বাজার ও যে আক্রান্ত হবে একথা বলাই যায়। ছবিকে এই দুঃসময়ে বাজারজাত হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কি কি পদক্ষেপ এখন গ্যালারীগুলো গ্রহণ করছে সেটাই দেখার।
এইভাবে নববর্ষ চলে এলো। বাঙালীর এক পরব এবার গৃহবন্দী থেকেই কেটে গেল। তাতে আক্ষেপ নেই। আমি তো তখন রোমান্টিকতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে এক আস্ত ভ্রুণের মুখেই চাপিয়ে দিলাম মাস্ক। আমার শিল্পী মন দায় সাড়ল।


প্রতিভাষ, স্কেচ - ৩

দেখছি যা কিছু তা মননে ছায়া ফেলছে, ভাবছি যা কিছু তা যেন সঠিকভাবে প্রকাশিত হয় না কখনোই। তবু মন ছুঁতে চায় এক সামগ্রিকতাকে।
কভিড নাইন্টিন কিন্তু আমাদের ভাবতে শেখালো যে মানুষে মানুষে দূরত্ব কি নিবিড়তার সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। কেউ তো কোথাও যাচ্ছি না কিন্তু হৃদয় যুক্ত হচ্ছে কতো অচেনা বিশ্ববাসীর সঙ্গে। জনতা কার্ফু দেখলাম, আলো জ্বালানো দেখলাম, দেখলাম এক সমন্বয়ের ছবিতে আমিও উদ্বেলিত। কভিডের দিলগুলোতে লকডাউনের মধ্যে তাই দিন গুজরাণ রোমান্টিকতাকে জাপটে। আমি মুক্তি খুঁজি অক্ষরে, লাইনে, স্কেচে, লেখায়। সর্বপরি অলসতা মাখানো হাড়হিম করা এক রোমান্টিকতায়।
রুদ্র কল্যাণ মেতেছে আবিরে
আহা! সুন্দর এই সাধণা মোতাবেক
ঋত হয়েছে, শহর ছুঁয়েছে শঙ্খচিল
মেতেছে আবিরে করুণার আখিঁজল
শান্ত ঈশানে দুলছে যেন বা অধুনা
আরামের গোচরে তীব্র এক মনস্তাপ
বাতাসের কল্যাণ যেখানে দোটানায়
আড়ালের রণক্লান্ত মুখ্য সমীপে  

অপরজনে প্রকাশিত একগুচ্ছ কবিতা


অপরজনে প্রকাশিত একগুচ্ছ কবিতা... পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক ক রুন -


 https://aparjan.com/2020/04/25/april2020-srgapo/




অক্ষরবৃত্ত
যেসব মেঘ পেড়িয়ে অক্ষরবৃত্ত
সেইসব মেঘের দেশে বিহান
কুয়াশা পুরাণ পোড়াচ্ছি ছন্দগীতি
আগামী উপভোগ্য অন্য সন্তান
বিবাহ বাসর এহেন পাথর কুড়িয়ে
সমুদ্র স্রোত জমানো বিছানা বালিস
রন্ধন রীতির সন্তান, ও পিতা পাক্ষিক
আগুন হয়ে ওঠা শূণ্য পুরাতন


শুয়া
মিলন ধ্বণির আখর ছড়াই
বিচ্যুত প্রাণ শুয়া ওঠা স্বর্গ
এ পর্যন্ত পরিসর বলছে বাহবা
শিমুলের উড়ে যাওয়া শিশুমন
অন্যমন হাতে তুলে নিয়ে রক্তপাত
বখেয়া হয়ে যাচ্ছে সনাতনী সন্ধ্যা
আলাপের গভীরে বিস্তার টানছে
গলির গর্ভে একটা হাতের শোক
কুড়িয়ে রাখছি ভিড়ের দীর্ঘশ্বাস।


নবারূণ
অপলক সে অন্ধ রাত ইশারায়
ঘুম ভেঙ্গে জেগে থাকা আঞ্চলিক
প্রকৃ্ত পাওয়া হয়ে ঘণায়মান দীর্ঘ
কতটা প্রকৃ্ত বাঁচার জন্য উদ্ধত
চিবুক নাভি আর মোমের ভূমিকা
শ্লীলতা থেকে সরে দাঁড়ানো পাখি
মিলন ধ্বণি মলাটে মসৃন
যেন বা তল্লাট উপচে নাগরিক
কথনে প্রান্ত অনুভূতির চক্রব্যুহ
কোলাহল আর কোলাহল বিচ্যুত
নবারূণ একটা প্রভাতের দীনতা।


আলজিভ
একটা ত্বরণ আচম্বিত আততায়ী
এক মামুলি তর্জমা উদাসীন নুড়িতে
অনেকক্ষণ নিষিক্ত গুঁড়ো উড়ে এসে
প্রথমেই চারণ, প্রথমত রুক্ষ চর্যা
বৃত্তচাপ কিছু রণণে লুকিয়ে রক্ষা পায়
অসীম শূণ্য ঘুমের মুখে উপত্যকা
জীবাশ্ম হতে চায় ঠোঁটের আলখাল্লা
পালিয়ে যাচ্ছে নিঝুম স্মৃতির পারাপার
হাসিমুখের ফুলদানি হাতে বালিকা বাগানে
রঙের আগ্রহ হয়ে ওঠে মাধবী বিতান
আলজিভের ছোঁয়ায় রক্তিমাভ ভোরবেলা


নাগরিক
আগুনের কাছাকাছি ক্যারামেল
বর্ণহীন হয়ে যাওয়া তীব্র টান
আচম্বিত নধর বাসনা বিচ্ছুরিত
তিলক আঁকছে আকাশের মেঘ
যেখানে চোখ খেলেছে সমকাল
তীব্র শ্বাস হয়ে ওঠে মেঘ মেদুর
শিখছে কি কিছু মুখোশের তুলনা
শান্ত মন, শান্ত প্রেক্ষিত মাতলা
যেখানে নিরাভরণ ক্ষুদ্র ভোরবেলা
প্রিয় হে পাথর যেমতো সন্তানের বৃক্ষ
যা কিছু অক্ষর ভুল পথে শূণ্য মোহনা


মেঘলা
স্তূপ মেঘের শিরোনামে ঘুমন্ত শব্দ
ভাঙতে চাইলে রোদ এসে পড়ছে নতজানু
ছায়ারা স্টেশনকে বলছে আয়নার স্বর
লিখে যাচ্ছি রঙবেরঙের লুপ্তপ্রায়
বাতিল কবিতার যথার্থ সামলে ভগ্নাংশ
নেমেছে বিপরীত চোখের অস্বীকার
মেঘেরা শুধুমাত্র আলজিভের বাগানে
নিদ্রামগ্ন কোজাগরী পাখিদের বসন্তকুঞ্জ
নিরাশ্রয় হাঁটতে ভোলেনি হতাশার গন্ধে


সম্পর্ক
সহানুভূতির কমলালেবুতে ঝিনুকের হোঁচট
শ্রাবণ আছড়ে জমিয়ে রাখছি খরতর
বিভোর অবগাহন যোগাবেশের শেষে
আঙুলের তিলে আচমনে বাঁচে সম্পর্ক
অতীত কিছুটা লালচে নীল হয়ে যায়
যেখানে গন্ধ উঠে যায় তামাটে
রতিসুখ হতে রক্ত ঝরে ঝরে পড়ে যায়
অকপট মুর্শেদ মাঝরাতের ডাল ভাতে
মনোক্রম খুশবুর স্বপ্নাতীত অক্ষরে
উপত্যকার উৎসবে উৎসারিত উদয় উদগীরণ
অশ্লীল ঘুমন্ত চোখ খুঁজে দেখে নিরীহ  



বহতা
ভুলে যাওয়া পাখিটির মাথায় গল্প
পালকের আবডালে শীর্ণকায় বারবেলা
ভৈ্রবের পাতায় ট্রেনের একদা
কিছুটা লোভনীয় স্মৃতির পাতলুন
কাঁচা রাস্তার আদলে মহাকাল
পক্ষপাতে ছুটছে অজানা গৃহস্থ
স্রোতের অনুসারী আরামের বহতা
যেখানে সবুজ মেঘলা শীতল যথা
অথবা নতুন কোনো সাগরের ওম্
বহতা একটা সময় সুন্দরকে ডাকছে
একটা বহতা সমস্ত ভুলের শীর্ণকায়

Friday, September 13, 2019

দার্জিলিঙের সফরনামা



২৪/০৪/২০১৭
পাহাড়ে কেউ সন্ধ্যাবাতি দেয় না
পাহাড়ে শাঁখ বাজে নি কোথাও
উসকোখুসকো হাওয়া রাতের প্রাচীর গড়ে
দাপুটে হাওয়া রাতের প্রাচীরে আনে মেলানকলি
পাহাড়ের বুকে রাত জাগি সোজাসাপটা
বিগত বাতাস আমাকে ছুঁয়ে আজান ডাকে
শ্বাসবন্ধ শুনে চলি ট্রেনের হুইসেল
পাহাড় ভর্তি খেলনার ঘরবাড়ি
এতটা কাছে যেন বুকে জড়ানো
মায়াঘন কোনো প্রত্যাহারের স্বরলিপি
ধিকিধিকি আগুন ভেজানো সাঁঝবেলা


২৫/০৪/২০১৭
হাওয়া ভাষ্য বিপদ বাড়াল
যেনবা পা হড়কে খাদের কিনার
শ্রুতি বিশ্রুত লেবং কার্ট রোড
হলকা কেবল শব্দের রোজনামচা
দূরের পাহাড় আলো হাতে জাগতিক
এক একটা আমি বেহুঁশ দাঁড়িয়ে থাকে
পরাভূত এক ব্যালকোনীর মৃদু শয্যা
গায়েত্রী মন্ত্রের মত পাহাড় প্রিয়তমা
অবিকল রোদ ছড়িয়ে ছড়িয়ে উঠে আসা
সান্ধ্যগীতির অতল হতে নিজেকে দেখছি
বিষাক্ত যে সকল নভতল ছুঁড়ে পাক্ষিক
মেঘাতুর এক আদাব রঙের রাত নামে


২৬/০৪/২০১৭
ধাতব মিশ্রিত আলোর কিনার
ঢালু পথের নিরালা
আপ্রাণ প্রাণবন্ত সরেজমিন
চেনা গলার আওয়াজ নেই
বিশ্রুত বিখ্যাত সন্ধ্যামালা
যেমতো খুঁজতে চাওয়ার নেশা
চড়াই নিংড়ে অগোছালো পাহাড়ী
আবদারে কেবল উতলা হচ্ছে চিরন্তন
হাঁটছি পথ, যে তাড়নায় শুভ্র থাকে
থাকে কিছু মেলবন্ধন অথবা আবছায়া


২৭/০৪/২০১৭
নিপুনতায় শিবির গড়ছে
মথের সাম্রাজ্য
আগুন চুরির গল্প শুনি
শুনছি হৃদয়ের উন্মুক্ত নিঝুমতা
ম্যালের ঢালে দাঁড়িয়ে দেখা
কিশোরী বেলা কাছে ডাকছে আচম্বিত
কিশোরেরা স্কুলের গন্ডি পাড় হওয়া
সুপ্ত কিছু ভ্রমরের মত অনাসক্ত
পাইনের বুক চিড়ে জাগছে কুয়াশা
মধ্যম সুরেলা ঢালু নেমে আসছে
পরিযায়ী বৃষ্টির সুর মাতোয়ারা


২৮/০৪/২০১৭
অক্ষর মেলে ধরি রোদের চাদরে
বৃষ্টির ভারী নিয়ে পাহাড় সবুজ
পাইনের বনের উচ্চতায় শুনশান বাঁচি
জলের স্রোত বুকের গভীরে ডাকছে
রাস্তার ঢালে ধরে রাখছি বিগত শয্যা
ময়ালের মতো পাহাড় জড়িয়ে নামছি
অরেঞ্জ ভ্যালির পথে ছায়ার মাখামাখি
শীতের হলকা তোমার মতই নাজুক
অপেক্ষার প্রত্যাহারে পাহাড়ী দিন গুজরাণ


২৯/০৪/২০১৭
মধ্যরাত এসে কুয়াশার নির্যাস রেখে যায়
নিসর্গের গভীরে পথ খুঁজে যায় দুর্বিপাক
খাদের কোলে উড়ন্ত কৌতুক স্বরলিপি শেখায়
শ্বাসরুদ্ধ দাঁড়িয়ে দেখি আলোর পাহাড়
পাঁজরের কৌতুকে আলোগর্ভ মৃণাল ডেকেছে দহন
পোড়া পাঁজরে ধ্বণির বিম্বিত প্রতিরাত
জন্মলগ্ন ছুঁয়ে আমাদের প্রতীকী উৎক্ষেপন
রাত এসে শুনিয়ে যায় আটপৌড়ে কল্পকাহিনী
রাতের অতলে বালুচরে মেঘ নামে অচিন
রাতকে ডাকি নিঃসঙ্গ প্রতিবিম্বিত মুদ্রায়


৩০/৫/২০১৭
ছিন্ন হয়ে আছি তীব্র কাঙ্কিত
কাঠের পাটাতনে হাওয়া আসে
যেন হুতাশন
ক্যাকটাস মেলে রাখা ঝুল বারান্দা
আলুভাতে দিব্যি সময় কাটছে সোহাগী
উদভ্রান্ত বিরোহী স্মৃতির পিছুটান
চড়াই শেষে উৎরাই যেন আবেগ ঘন
গেরি গুগলির গল্পে সন্ধ্যা কাবার
মেঘ নামে জানালার আতসে
খুঁজে পেতে চায় দুর্নিবার কুহুতান।


৩১/০৪/২০১৭
মায়াঘন মেঘ ঘনিয়ে আসছে
নিরাপদ এক সংসার জমেছে ব্যাগে
আসমানী বিভেদের মতো মুখচোরা
বিগত বয়স ছুঁড়ে ফেলি খাদের কিনারে
ঘাসফুল জমা করে পথ হাঁটছি চড়াই
নিঝুম উৎরাই জমা হয় পিঠের ব্যাগে
ভাড়ী হয়ে মেঘ ঝরে যায় ঘোলাটে
বাদামতামের পথে রাজপথ নেমে আসে
যে পথে আজান গাঁথা ছড়িয়ে রয়েছে


১/৫/২০১৭
বিগত স্নান ছায়ার আবডালে রাখা
মেঘের গর্জনে তন্দ্রাচ্ছন্ন স্নায়ুকাল
যুগল যেমতো বোধের পরিসরে হলকা
মায়ামৃদু পাক্ষিক
          
হাওয়ার দাপটে গুম্ফাবাড়ী স্থানুবৎ
নদীরা এখানে গহীন
          


২/৫/২০১৭
শিকড়ের নীচে ছড়ালো মধ্যরাত
সত্যিকারের একটা আকাশ
          
জলের প্রপাত এসে দুপুরকে বলছে
    
রক গার্ডেনকে নীচে ফেলে
গাড়ী চলেছে ঋষিহাট
খুঁজে যাচ্ছি পাখিদের বিশ্ময়
পাইনের ঘুম জড়ানো
পাথুরে পথের বসন্তবিলাপ